কে নেবে এই মৃত্যুর দায়ভার?
আর মাত্র একদিন পরেই ঈদ। কাজ শেষে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করার জন্য বাড়ি ফেরার কথা ছিল টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানার শ্রমিকদের। কিন্তু তা আর হলো না। স্বজনদের অপেক্ষারও হলো না অবসান। ‘দুর্ঘটনা’ কেড়ে নিল অনেকের প্রাণ। এসব মৃত্যুর কোনো সান্ত্বনা হয় না। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে একের পর এক ঘটে চলেছে এসব দুর্ঘটনা। কারো কোনো বিকার নেই। কিন্তু এভাবে আর কতো দিন?
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক মোড়ে গতকাল শনিবার সকালে একটি অ্যালুমনিয়াম ফয়েল তৈরির কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অনেকে।এ ঘটনায় কারখানার ভবন ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণের ফলে ওই ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কাজ করলেও মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো যায়নি। এতসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা দেখিয়ে দিল এদেশে শ্রমিকের জীবন এখনো কতোটা বুঁকিপূর্ণ। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। অনেকেই আছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব কে নেবে? বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ যেসব কারখানায় থাকে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সদা সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু টঙ্গীর কারাখানা কর্তৃপক্ষের যে এ ব্যাপারে অবহেলা ছিল সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষ বার কবে বয়লার পরীক্ষা করা হয়েছে সেটিও কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না। অর্থাৎ নিরাপত্তার দিকে কারো কোনো নজরই ছিলো না।
পুরান ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডি, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনার পর ঘটলো টঙ্গীর দুর্ঘটনা। এতে বুঝা যাচ্ছে আমাদের শিল্প খাতের নিরাপত্তাব্যবস্থা আধুনিক ও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে হয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি বা দুর্ঘটনা এড়াতে তেমন কোনো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা থাকে না। যার ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফার দিকে যতোটা মনোযোগ থাকে নিরাপত্তার দিকে তারা ততোটাই উদাসীন থাকেন। এটা কাম্য হতে পারে না। টঙ্গীর ঘটনায় তদন্ত করে দেখতে হবে কোথায় কি গাফিলতি ছিল। নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসাও নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Share on Skype (Opens in new window)
- Click to share on Google+ (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to email this to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)