আমানত ও ঋণের সুদহার কমেছে
0
ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংক ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণের উদ্বৃত্ত তারল্য জমে আছে। এতে ব্যাংকগুলো এখন আর আগের মতো উচ্চ সুদহারে আমানত সংগ্রহ করছে না। ফলে ব্যাংকের আমানতে সুদহার কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। আর ঋণের চাহিদা কম থাকায় ঋণের সুদহারও কিছুটা কমাতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংকগুলো। জুলাই শেষে আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মে কোনো ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের (স্প্রেড) সুদ ব্যবধান ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি হতে পারবে না। জুলাইয়ে ব্যাংকের ভোক্তা খাতে বিতরণ করা ঋণ বাদ দিয়েই স্প্রেডের হিসাব দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রেও স্প্রেড সীমা বেশি রয়েছে ২৩টি ব্যাংকের। এ তালিকায় বেসরকারি খাতের ১৫টি, বিদেশি খাতের ৫টি ও সরকারি খাতের ২টি ব্যাংকের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, আমানতের অনুপাতে ঋণের সুদহার না কমায় স্প্রেড প্রত্যাশিতহারে কমছে না। এর জন্য খেলাপিঋণ বৃদ্ধিই দায়ী বলে মনে করছেন তারা। গত ২১ জুন এক চিঠিতে ১৫ দিনের মধ্যে স্প্রেড ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সে নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে এসব ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই শেষে ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই সুদহার কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে ঋণের সুদের তুলনায় আমানতের সুদ বেশি কমেছে। এ সময়ে দেশের ৫৬টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদ কমায় জুলাইয়ে গড় স্প্রেড দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা জুনে ছিল ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ ছাড়া মে মাসে এ খাতে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশীয় পয়েন্ট স্প্রেড ছিল। তবে এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশের নীচে অবস্থান করলেও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড এখনো ৬ শতাংশীয় পয়েন্টর ওপরে রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, সরকারি ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ সুদ আদায় করছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে পাঁচ দশমিক ৩৯ শতাংশ সুদ। এ খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ২৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। সরকারি বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম। মাত্র দুই দশমিক ছয় শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এ দুটি ব্যাংক ছয় দশমিক ৯৪ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করে ৯ শতাংশ সুদ ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময় বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ ছিল ১০ শতাংশের নীচে। তবে আমানতের সুদহার অনেক কম থাকায় স্প্রেড অনেক বেশি। যা ছয় দশমিক ৭২ শতাংশীয় পয়েন্ট। জুলাই মাসে আমানতের বিপরীতে সুদহার মাত্র এক দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ঋণের ক্ষেত্রে করছে আট দশমিক ৫২ শতাংশ আদায় বিদেশি ব্যাংকগুলো।
নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে স্প্রেড বেশি রয়েছে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। আমানতের বিপরীতে পাঁচ দশমিক ৭১ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণের বিপরীতে আদায় করছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। স্প্রেড হয়েছে চার দশমিক ৯৫ শতাংশীয় পয়েন্ট।
দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহার ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ (১০ শতাংশের নীচে) নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার আরো কমানোর লক্ষ্যে আমানতের বিপরীতে সুদহার কমিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের সুদহারের ব্যবধানও বেশ খানিকটা কমেছে। গত জুলাই মাসের প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নীচে নেমেছে। তবে বেশিরভাগ বিদেশি ব্যাংকের স্প্রেড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ঋণের সুদের হার নির্ভর করে ব্যাংকগুলোর আমানত তথা তহবিল সংগ্রহ খরচ, প্রশাসনিক ব্যয়, প্রভিশন ব্যয়, মুনাফার মার্জিন প্রভৃতির ওপর। বর্তমানে ব্যাংকের বিভিন্ন সেবার চার্জ, ফি, কমিশনের যৌক্তিকীকরণ, ব্যাংক শাখা স্থাপনে উচ্চ ব্যয় পরিহার ও যানবাহন ক্রয়ে খরচ সীমিত করার নীতি গ্রহণের ফলে ব্যাংকের সার্বিক তহবিল খরচ কমছে। এতদিন আমানতের সুদহার কমে এলেও ঋণের সুদহার সে হারে কমছিল না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ এবং স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বিচার বিবেচনাপূর্বক প্রকৃত ঋণগ্রহীতা নির্বাচন করে ঋণ সম্প্র্রসারণের মতো পর্যাপ্ত তারল্যও ব্যাংকগুলোর হাতে রয়েছে।