নকলায় তীব্র গরমে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ ! বিপর্যস্ত রোজাদার
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধ : বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন রোজাদারগণ। শনিবার জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই।
পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। গত কয়েকদিন ধরে বইছে তীব্র তাপদাহ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অসহনীয় গরমের তীব্রতা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। তবে খেটে খাওয়া কিংবা দিনমজুর মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি। রোজা রেখে তীব্র গরম সহ্য করে চালিয়ে নিতে হচ্ছে জীবিকা নির্বাহের কাজ।
বৈশাখের আগে থেকেই ভয়াবহ তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কয়েক দিন ধরে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। বৈরী আবহাওয়া ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।
প্রচন্ড গরমে কাজ করতে না পেরে বিপাকে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। গরমে পানিশূন্যতাসহ নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় পেশাজীবী, শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালকদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তীব্র গরমে পানিশূন্যতা কিংবা হিটস্ট্রোক হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেল অসহনীয় গরম আর তাপপ্রবাহের মাত্রা বাড়তে থাকার সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেট ও সড়ক গুলোতে মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল, বিপণীবিতান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অসহ্য ভ্যাপসা গরমে কষ্ট হলেও ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন পরিবহনের চালক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ কর্মজীবী মানুষেরা গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন।
জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের রিক্সাচালক জামাল উদ্দিন বলেন, “যে গরম পড়ছে, রোজা রেখে রিক্সা নিয়া রাস্তাত বারাইতে ডর করে। গরমের কারনে অনেক রিক্সা চালক রোজা ছেড়েদিছে। তাই বুগোলের ভাড়া ছাড়া বেশি দূরাত ভাড়া নিয়া যাইনা। আবার অতিরিক্ত গরমের কারণে লোকজন কম বের হচ্ছেন। ফলে ভাড়াও বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।” এতে তার আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে তিনি জানান।
চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্ধটেকী এলাকার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী শীমানুর রহমান সুখন বলেন, “আমার জীবনে রোজার মাসে এমন গরম দেখিনি। একদিকে সূর্য়ের তাপে ভ্যাপসা অসহ্য গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। প্রচন্ড গরমে কাজ করতে না পেরে বিপাকে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।” তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারনে অনেক বৃদ্ধ ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে তিনি জানান।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, সব কৃষকের বোরো আবাদের মাঠের ধানে থুর হয়েছে। এখন পানি বেশি দরকার। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমতো। কিন্তু এমন সময়ে বোরো আবাদে বাড়তে সেচ দেওয়ার ফলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে। এতেকরে কৃষকরা অপেক্ষাকৃত লাভ কম পাবেন বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
অসহনীয় গরমের কারনে অনেক নতুন ও শিশু-কিশোর রোজাদারগন রোজা রাখতে না পেরে রোজা ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। অসময়ে মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারনে সম্ভাব্য হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল গুলোকে যথাযথ ভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।