নকল নবিসদের কর্ম বিরতী : নকলার জনগণ চরম ভোগান্তিতে
মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
শেরপুরের নকলায় এক্সট্রা মোহরার (নকল নবিস)-দের চাকরি সরকারি করনের একদফা দাবিতে ৪ ডিসেম্বর থেকে চলছে কলম ও কর্ম বিরতী। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তলব ও দলিলের নকল তোলতে আসা ভুমি মালিকরা। বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবিস) এসোসিয়েশন, নকলা উপজেলা শাখার সভাপতি নূরনবী ও সাধারণ সম্পাদক মালেক বলেন, যতদিন পর্যন্ত দাবি মানা না হবে, তত দিন পর্যন্ত তাদের কলম ও কর্ম বিরতী চলবে। সরজমিনে দেখা যায় নকল নবিসদের কেউ অফিসে নেই। সবাই বাইরে কলম ও কর্ম বিরতীর ব্যানার ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
জরুরি কাজে নকল তোলতে আসা ভূরদীর ইসমাইল বলেন, দলিলের নকলাটা তার জরুরি। কিন্তু কর্ম বিরতি থাকায় তিনি মহা ঝামেলাতে পড়ে যেতে বসেছেন। নকলা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার গোবিন্দ সাহা বলেন, নকলা রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারি ১ জন টিসি মোহরার, ২ জন মোহরার ও ২৩ জন এক্সট্রা মোহরার বা নকল নবিস সহ মোট ২৬ জন নকল নবিস দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। ৪ ডিসেম্বর থেকে নকল নবিসরা কর্ম বিরতীতে থাকায় জন সেবা চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আগে দৈনিক ৭০/৮০ টি দলিল হলেও বর্তমানে মাত্র ২/৩ টি করে দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে, কিন্তু তার রেকর্ট নিয়মিত বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। সরকারি টিসি মোহরার আঃ রউফ, মোহরার খলিলুর রহমান ও আঃ সামাদ বলেন, তাদের পক্ষে যতটুকু জন সেবা দেওয়া সম্ভব ততটুকু তারা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে যে কাজ ২৬ জনে করতেন সে কাজ ৩ জনের পক্ষে করা কোন ক্রমেই সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে দলিলের নকল তোলতে আসা, তল্লাশি দিতে আসা সহ নকল নবিস সমপৃক্ত যে কোন কাজ করতে আসা সবাইকে সেবা দিতে পারছেন না তারা। বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবিস) এসোসিয়েশন, নকলা উপজেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা আলমগীর হোসেন সেগুন ও কোষাধক্ষ্য আজাহারুল ইসলাম বলেন, দলিল রেজিস্ট্রি কম হওয়ায় শুধু জনগনই ভোগান্তিতে পরেনি, সরকারের রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। দলিল লেখক আলাল উদ্দিন বলেন, জমি বিক্রেতারা দলিলের নকল তোলতে না পারায় তাদের বসে বসে দিন কাটাতে হচ্ছে। জনগনের ভোগান্তির পাশাপাশি দলিল লেখকদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নকলা ভুমি অফিসের নায়েব হযরত আলী জানান, নকল নবিসদের কর্ম বিরতীর জন্য জমি রেজিস্ট্রি কম হওয়ায় দাখিলা, খাজনা, নামজারী একদম হচ্ছে। তাতে রাজস্ব আদায়ের হার ক্রমান্বয়ে অনেক নিচে নেমে আসতেছে।
তথ্য মতে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারীতে সংগঠনের পক্ষে চাকরি সরকারি করনের দাবিতে আবেদন করা হয়। তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি না দেখে ১২ এপ্রিল থেকে শান্তি পূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন শুরু করে। ৩ মে প্রধান মন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেন তারা। সংশ্লিষ্ট দফতরে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের জন্য পত্রের মারফত অনুরোধ জানানো হয়। ১৭ নভেম্বরে পুনরায় দাবি বাস্তবায়নের জন্য পত্রের মারফত তাগিত পত্র প্রেরনের মাধ্যমে অনুরোধ জানান তারা। এতেও কোন অগ্রগতি নাদেখে ২৫ নভেম্বর কার্যকরি পরিষদের সভায় ৪ ডিসেম্বর হতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ৬১ টি জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে সদর মহাফেজখানা সহ ৫০১ টি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অবিরাম কলম বিরতী ও কর্ম বিরতী কর্মসূচী পালন করতে আহবান করা হয়। তার অংশ হিসেবে শেরপুরের নকলায় ওই কর্মসূচী চলছে।