কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে ‘আম্মা’র বিদায়
আলো ডেস্ক: কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রখ্যাত অভিনেত্রী জয়ললিতা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সোমবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। এনডিটিভি, আনন্দবাজারসহ ভারতীয় সব গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।
জয়ললিতার মৃত্যুতে ভারতজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ‘আম্মা’ খ্যাত এই অভিনেত্রীর মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তাঁর ভক্তরা।
গত ৭৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জয়ললিতা। তাঁর অসুস্থতার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে দল এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বার বার দাবি করা হচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠছেন। সোমবার তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন বলে জানানো হয়। সন্ধ্যায় প্রথমে তার মৃত্যুর খবর প্রচার হলেও অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই খবর ঠিক নয়। তবে তার অবস্থা যে সংকটাপন্ন সেটা আগেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
অভিনেত্রী থেকে জননেত্রীতে পরিণত হওয়া জয়ললিতা বারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তামিলনাড়ু থেকে। এই রাজ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। গত দুই দশক ধরে কেন্দ্রে সরকার গঠনে নির্ণায়ক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। ভারতের রাজনীতিতে অন্যতম শক্তিশালী নারী হিসেবেও পরিচিত জয়ললিতা।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
১৯৮২ সালে অপর জনপ্রিয় অভিনেতা ও দুঁদে রাজনীতিক এম জি রামচন্দ্রনের হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন তামিল সিনেমার জনপ্রিয় মুখ জয়ললিতা। যোগ দেন এ আই এ ডি এম কে–তে। ১৯৮৩ সালে দলের প্রচার বিভাগের প্রধানের পদ পান তিনি। সেই থেকেই রাজনীতিতে তাঁর মারকাটারি জনপ্রিয়তার শুরু। সেই বছরই বিধায়ক পদে জিতেও আসেন তিনি। পাশের রাজ্য কর্নাটকে জন্ম নেয়া জয়ললিতার ইংরেজি ছিল পছন্দের। তাই কয়েক বছরের মধ্যেই পার্টি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান এম জি আর–এর নয়নের মনি হয়ে ওঠেন তিনি। জয়ার ইংরেজিতে দখলের জন্যই পার্টি প্রধান এম জি আর চেয়েছিলেন, তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। কিন্তু একটি তামিল পত্রিকায় নিজের জীবনের ব্যক্তিগত কথা লেখা নিয়ে জয়ললিতার সঙ্গে বিরোধ বাধে রামচন্দ্রনের। ১৯৯০ সালে মৃত্যু হয় রামচন্দ্রনের। তারপর একদল লোক চলে যায় রামচন্দ্রণের স্ত্রী জানকির দলে। আরেকদল থেকে যায় জয়ললিতার নেতৃত্বে।
তারপর থেকেই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে আম্মার। ১৯৮৯ সালে, যখন রামচন্দ্রনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, সে বছরে পার্টি বিধানসভার নির্বাচনে পরাজিত হয়। প্রথম মহিলা বিরোধী দলনেত্রী হন জয়া। এরপর ১৯৯১, রাজীব গান্ধী হত্যার পর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ২৩৪ টি আসনের মধ্যে ২২৫টি আসনে জয় পায় এ আই এ ডি এম–কে। মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতা। এরপর থেকে মোট পাঁচবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছেন তিনি। মাঝে একবার সম্পত্তির মামলায় মুখ্যমন্ত্রী পদ হারিয়ে জেলেও গেছিলেন। কিন্তু তামিলনাড়ুর উচ্চ আদালত ছাড় দেয়ার পরেই ফের তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন।
২০১৬ সালে বিপুল ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় আসেন তিনি। কিন্তু এই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন চেন্নাইয়ের অ্যাপেলো হাসপাতালে। সেরে উঠছিলেন। কয়েকদিন আগেই খবর এসেছিল, সেরে উঠেছেন জয়ললিতা। এবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কাজে যোগ দেবেন। এই ঘোষণা হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানোর পরদিনই ফের অসুস্থ হলেন আম্মা। সংকটজনক অবস্থায় ভর্তি হলেন হাসপাতালে। আগেরবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর ফেরা হলো না।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Share on Skype (Opens in new window)
- Click to share on Google+ (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to email this to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)