শেরপুরে অসহায় অন্তঃসত্ত্বাদের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন গরিবের ডাক্তার অমি
মইনুল হোসেন প্লাবন, শেরপুর : করোনা ভাইরাস মহামারিতে গ্রামের নারী ও শিশুদের শহরে সেবা নিতে যাওয়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে। অসহায় অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বিষয়টি আরও কঠিন। ঠিক এমন সময় শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম ঘুরে বাড়ি গিয়ে গরীব-অসহায় অন্তঃসত্ত্বাদের চিকিৎসা ও বিনা মূল্যে ওষুধ দিয়ে আসছেন সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমিন রহমান অমি। ঘরে বসে এমন সেবা পেয়ে খুশি ওইসব অসহায় মহিলারা। সদরের ১৪টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রাম ঘুরে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ায় আলোচনায় কেন্দ্রে এখন হুইপ কন্যা ডা. অমি। তাকে সবাই ডাকছেন ‘গরিবের ডাক্তার’।
জানা যায়, চলতি বছরের জুনের শুরু থেকেই শেরপুরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। মৃত্যুর পাশাপাশি প্রতিদিনই বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলায় করোনার সংক্রমণ দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। করোনা সংক্রমণ রোধে কয়েক দফায় লকডাউন ও বিধিনিষেধ আরোপ করায় ঝুঁকিতে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুরা। তাদের সেবায় এগিয়ে আসেন ‘গরিবের ডাক্তার’ অমি।
গাজীরখামার ইউনিয়নের অসহায় অন্তঃসত্ত¡া রহিমা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে এহন করোনা রোগী বেশি। তার জন্য আমরা হাসপাতালে গেলে আগের মতো চিকিৎসা পাই না। ‘আপারা আমাগো বাড়ি আইসা চিকিৎসা দিয়া গেতাছে (যাচ্ছে)। এতে আমরা অনেক খুশি।’ সদরের রৌহা গ্রামের অন্তঃসত্ত¡া আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘করোনা বাড়ছে। হাসপাতালে করোনা রোগী থাকায় যাইতে ভয় লাগে। ‘আর এমনিতে আমরা গ্রামে থাকি। আমগোর বাড়িত আইসা ফ্রিতে ওষুধ দিতাছে। এতে আমাদের খুব উপকার হইতাছে।’ সদর উপজেলার কামারিয়া গ্রামের মুনসুর মিয়া বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষ বেশি কিছু বুজি না। করোনায় বাড়ির মা, বোনগো নিয়া চিন্তায় আছিলাম। ‘বাড়িতে আইসা অমি আপা চিকিৎসা দিল, অসুধ (ওষুধ) দিল। আমাগো এলাকার মহিলাগোর খুব উপকার হইল।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শারমিন রহমান অমি বলেন, ‘গর্ভবতীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে কখনো নিজ গাড়ি আবার কখনো বা হেঁটে ছুটে চলেছি। এতে বাড়িতে থেকেই সেবা পাচ্ছেন ৭ থেকে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত¡া ও নবজাতক শিশুরা। ফলে অনেকটা নিশ্চিন্তে রয়েছেন ওইসব পরিবারের সদস্যরা।’ তিনি আরও জানান, চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি হাত ধোয়ার জন্য নিজের তহবিল থেকে একটি করে সাবান ও মাস্ক বিতরণ করছেন। আর করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করেছেন। এদিকে, যতদিন করোনা ভাইরাস থেকে দেশ সুরক্ষা না পাচ্ছে, ততদিন শেরপুর সদরের ১৪ ইউনিয়নে ওইসব চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ‘গরিবের ডাক্তার’ অমি।