নানা সমস্যায় জর্জরিত শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা
শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি :
নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। অন্তহীন এ সব দুর্নীতি ও সমস্যা কবে সমাধান হবে তা জানেনা কেউ। দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ রাখা হয়েছে আল্ট্রাসোনোগ্রাফ, ইসিজি, যান্ত্রিক ত্রæুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সম্প্রতি আনা এক্সরে মেশিন। ফলে রোগীদের ভরসা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। এতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে এ উপজেলার দরিদ্র লোকজনদের। ফলে এক শ্রেণির দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। রোগী হাসপাতালে আসলেই তাদেরকে ফুসলিয়ে ডায়াগনোস্টিক ও প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। রোগীদের নিয়ে নিচ্ছেন তাদের কমিশন। ডাক্তার সংকট থাকায় দুর দুরান্ত থেকে আসা শত শত রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে। বর্তমান সরকারের চিকিৎসা সেবা মানুষের দুর্গোরায় পৌছানোর প্রতিশ্রæতি থাকলেও শ্রীবরদী উপজেলার ১০টি ্ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় তিন লক্ষ মানুষ প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার ভবণ উদ্বোধন করা হলেও জনবলের অভাব সহ নানা সমস্যায় ৫০ শয্যা হাসপাতালের কোন সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা। উল্টো টিকিটের নামে গুনথে হচ্ছে অর্থ। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে ১৪ জন। কর্মরত নেই কোন গাইনী কনসালটেন্ট। ফলে মহিলা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ১৪ জন কর্মরত ডাক্তার থাকলেও ডাঃ আশিকা পারভীন, সরিষাবাড়ী হাসপাতাল, ডাঃ মির্জা মাশরুর হক, চমেক হাসপাতাল, ডাঃ ওবায়দুল হক, কিশোরগঞ্জ ইউএইচসি, ডাঃ আকরাম হোসেন,সিভিল সার্জন অফিস, শেরপুর, ডাঃ সৈয়দ আলী আহাদ, কুয়েত মৈত্তি হাসপাতালে প্রেষণে ও ডাঃ ইফতেখার রেজা বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে যারা কর্মস্থলে রয়েছেন মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থাকায় বাহিরে যেতে হয়। ডাক্তারের সঙ্গে সঙ্গে নার্সও সংকট রয়েছে। যাহার কারণে ভর্তিকৃত রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। ডাক্তার সংকট থাকায় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ রোগী দেখছেন দেদারছে। এতে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপেনজেটিভরা তাদেরকে ম্যানেজ করে বাড়তি ঔষধ কিনাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন অনেক রোগীই। এছাড়াও রোগীদের হয়রানি, অযথা টেস্টসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের বিরুদ্ধে। সাতানী শ্রীবরদী মহল্লার বিউটি বেগম বলেন, আমার হাত ভেঙ্গে গেছে। আমি হাসপাতালে এক্সরে করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে বাহিরের ডায়াগনোস্টিক হাসপাতাল থেকে এক্সরে করে নিলাম। জালকাটা গ্রামের রমেছা বেগম বলেন, আমি তলপেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গাইনী ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু গাইনী ডাক্তার না থাকায় চলে যাচ্ছি। অন্ত:স্বত্তা নারী নিশা আক্তার বলেন, গাইনী ডাক্তার না থাকায় আমি বাধ্য হয়ে শেরপুর চলে যাচ্ছি। জালকাটা গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, আমি আমার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। আমার বাবার হঠাৎ বুক ব্যথা। ডাক্তার বলেছে ইসিজি করতে হবে। হাসপাতালে ইসিজি করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে লাইফ কেয়ার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে ইসিজি মেশিন নিয়ে আমার বাবার ইসিজি করা হল। হাসপাতালে ইসিজি মেশিন নাই? এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বহির বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫শ রোগী আসেন। ডাক্তার ও জনবল সংকটে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফ ও ইসিজি মেশিন বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্ডিওগ্রাফীসহ জনবল না থাকায় মেশিন দুটো বন্ধ রয়েছে। তবে এক্সরে মেশিন সম্প্রতি আনা হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িকের জন্য বন্ধ আছে। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। দ্রুতই ঠিক করা হবে।