সম্মুখের ঊর্মিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেঊ —তালাত মাহমুদ

বাঙলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনার দেশ। এদেশের আলো বাতাস মাটি পানি ও ঋতু পরিবর্তনের সাথে প্রকৃতির যে রূপ বদলের বিচিত্র সমাহার তা সত্যি মনমুগ্ধকর। অর্ধশতাব্দীকাল আগেও এ দেশে আবহমান পল্লী-বাঙলার কৃষককুলের বনেদী ঐতিহ্য হিসেবে গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু ছিল। বাড়ি বাড়ি নবান্ন উৎসব আর পিঠেপুলি সেমাই পায়েসের আনন্দমুখর আয়োজন ছিল। আপন-পর, ধনী-গরিব সবাই মিলে আনন্দে মেতে উঠত। জারি সারি পল্লীগীতি পালাগান আর ভাওয়াইয়া গানের আসর বসত। যাত্রাপালা ও নাটক হতো প্রতি শীত মওসুমে। নারী-পুরুষ সবাই মিলে রাত জেগে গান শুনতো, যাত্রা ও নাটক দেখত। গরুগাড়িতে চড়ে আমারা নানাবাড়ি যেতাম। গরুর গলার ঘন্টির শব্দ আর কাঠের চাকার কড়কড় শব্দ শুনে শুনে গাড়িতে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়তাম।
কিন্তু আজ? আজ যন্ত্রদানবের দাপটে সেই গরুগাড়ি আর নেই। আজ দেশের সিনেমা হলগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ শিল্প সংস্কৃতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আকাশ সংস্কৃতি আর বেলেল্লাপনার অপ-সংস্কৃতি এসব স্থান দখল করে নিয়েছে। আর তরুণ-তরুণীদের মাথা খাচ্ছে। কিন্তু কেন? এমন তো হবার কথা ছিলনা। অর্থ উপার্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে মানুষ। কুপথে হাঁটছে মানুষ, প্রতারণা আর ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। অবৈধ উপায়ে রাতারাতি কোটিপতি হবার জন্য এমন কোন অপকর্ম নেই যা মানুষ করছে না। এসব অপকর্ম যারা করে তাদের সিংহভাগই শিক্ষিত এবং উচুঁতলার মানুষ। বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। দেশের উন্নয়ন আর গণ-মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন কি এভাবে হয়? আমার দেশের কৃষক-কৃষাণী দুর্নীতি করেনা, আমার দেশের মজুর-শ্রমিক দুর্নীতি করেনা, আমার দেশের তাঁতী জেলে কামার কুমোর ইত্যাদি শ্রেণি পেশার মানুষ দুর্নীতি করেনা। তাহলে দুর্নীতি করে কারা? গাড়ি-বাড়ি আর কাড়িকাড়ি টাকার মালিকই বা কারা হয়? ডিআইজি মিজান, সিলেটের ডিআইজি (প্রিজন) আর ওসি প্রদীপের কথা নাইবা বললাম।
রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়েও চলে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ক্যাসিনো বাণিজ্য, মজুদ ও ভেজাল বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য আর কলমের মারপ্যাচ বাণিজ্য। আরও অনেক প্রকারের বাণিজ্য চলে। সবই চলে বস্ বা বড়ভাইদের নির্দেশে। এখন চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজ, জুচ্চোর, সুদখোর, চোর-চোট্টারাও রাজনৈতিক নেতা বনে গেছে। কে’বা আসল আর কে’বা যে নকল- চিহ্নিত করাই দুস্কর। খুন-খারাবি আর সুযোগ্য চেয়ার অযোগ্য ব্যক্তিদের দখলে গেল কিভাবে সেকথা নাইবা লিখলাম। ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক নেতাদের দলের মাঝে কেন মূল্যায়ণ হয়না সে জিজ্ঞাসাও রাখলাম না।
‘সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব’ ছাড়া মোহগ্রস্ত জাতিকে উদ্ধার করা যাবেনা। ‘ইতিহাস দেশপ্রেমিকের জন্ম দেয় আবার দেশপ্রেমিকই ইতিহাস সৃষ্টি করে’। একথা আমি অনেক সভা সেমিনারে বলেছি। আমি এও বলেছি যে, আমার এমন একটি সার্বভৌম ক্ষমতা আছে, যে ক্ষমতাবলে আমি সর্বজন শ্রদ্ধেয় হতে পারি; আর সেটা হল চরিত্রবল। কিন্তু কে শুনে কার কথা!
বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে জনশক্তি রপ্তানির উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছিলাম। এবিষয়ে ‘দৈনিক ঢাকা রিপোর্ট-এ আমার উপসম্পাদকীয় কলামে জনশক্তি রপ্তানির সাফল্য ও ব্যর্থতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি, আদমবেপারীদেও প্রতারণায় দেশের হাজার হাজার পরিবারের সর্বশান্ত হওয়ার কিছু করুণ চিত্রও তুলে ধরেছিলাম।
সেটা ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের কথা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে লেখাটিতে আমি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শ্রমিক ও টেকনিশিয়ান যাদের স্ব স্ব পেশার ক্ষেত্রে দক্ষতা, যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ আছে তাদের সহ যাদের এসব যোগ্যতা নেই তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবীশ কালীন কোর্স করিয়ে দক্ষ বা আধাদক্ষ শ্রমিক বা কর্মী হিসেবে সনদপত্র দিয়ে দালাল বা বাটপারদের দায়িত্ব না দিয়ে সরাসরি এসব নারী ও পুরুষ কর্মী বা শ্রমিককে বিদেশে যাবার সুযোগ করে দিতে হবে। এছাড়া বিদেশ যাবার যাবতীয় খরচ সরকার যেকোন তফসিলী ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে প্রদান করবে। তাতে বিদেশ গমনেচ্ছুকরা প্রতারিত হবেনা।
বিশ্বের অনেক দেশে জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে নির্মাণখাতে রাজমিস্ত্রী বা কারিগরের চাহিদা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন নির্মাণখাতে অন্তত: ৬ মাস কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। অত:পর এসব নির্মাণ শ্রমিকদেও দক্ষতার সনদ বা অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে এদেও বিদেশে প্রেরণ করলে এরা আশাতীত পরিমান সাফল্য লাভ করবে। ভাল পারিশ্রমিকও পাবে। একই কাজে একজন দক্ষ শ্রমিক যে পারিশ্রমিক বা বেতন পায় একজন অদক্ষ বা আধাদক্ষ শ্রমিক পায় তার অর্ধেক বেতন। যে বেতন দিয়ে তার নিজের ভরণপোষণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট, সেলস ম্যান, রেসিডেন্সিয়াল জব, ফার্ম ও কনস্ট্রকশন বা নির্মাণখাত, পরিবহন সহ বিভিন্ন শ্রমখাতে আমাদেও দেশের ২০-৩০ বছর বয়েসী পুরুষ ও নারীদেও প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস ইনস্টিটিউট’ চালু করে স্বল্প ও মাঝারি শিক্ষিত বেকারদের মেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে পাঠালে এরা সুফল বয়ে আনবে। এসব বিষয় নিয়ে আমি একাধিকবার লিখেছি। আমি আমার অভিমত করেছি যে, একমাত্র দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী হতে পারে। বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদেও রেমিটেন্স এবং আমাদেও গার্মেন্টস সেক্টও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। এ অবদান আরও জোরালো ও বিস্তৃত করার জন্যই সরকারের কাছে আমার দাবি ছিল। এছাড়াও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ অনেক খাতে নিয়োজিত থেকে দেশের জন্য বিরাট সাফল্য বয়ে আনতে পারেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে এসে তাদেও দেশের অসংখ্য মানুষকে ভারতে আসার সুযোগ কওে দিয়েছিল।ইউরোপীয়, পর্তুগীজ, ফরাসী, আরবদেশীয় বণিক ও ধর্ম প্রচারক সহ বিভিন্ন দেশের মানুষ ভারতবর্ষে এসে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে তারা দখলদারিত্ব করেছে।ভারতে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তারা নিজ নিজ দেশকে সমৃদ্ধ করেছে। জনশ্রæতি আছে যে, রাণী এলিজাবেথের মুকুটে যে কোহীনূও মনিটি শোভা পাচ্ছে সেটা ভারত থেকে নেয়া হয়েছিল।
আমরা জানি, বিশ্বের সেরা ধনী ও সভ্য দেশগুলোতে গিয়ে আমাদের মেধাবী সন্তানরা বিদ্যায়, প্রজ্ঞায়, মেধায় আবিস্কারে, চাকরিতে ও ব্যবসায় অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন। অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ধরণের খামারও গড়ে তুলেছেন। এমন অনেকে আছেন, যারা লেখাপড়া বা চাকরির সুবাদে গিয়ে বিদেশকেই তাদের স্বদেশভ‚মি মনে করছেন। অনেকে আবার নাগরিকত্বও নিয়েছেন। সে সব দেশে তারা সামাজিকতা ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। সে সব দেশে তারা সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা ভোগের পাশাপাশি রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের মেধাবী সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। এটা আমাদের জন্য কম গর্বের কথা নয়। সৌদী আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, বৃটেন ও ভারত সহ বিভিন্ন দেশে আমাদের সন্তানরা শিক্ষকতাও করছেন এবং তারা যোগ্যতা ও দক্ষতাগুণে ভাল অবস্থান করে নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে অসংখ্য প্রবাসী বাঙালির বাড়ি রয়েছে, নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে সব দেশে তারা বাঙালি কমিউনিটি গড়ে তুলেছে।
বর্তমানে বাঙলাদেশে চলছে ক্যাসিনো বাণিজ্য, ঘুষ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য, তেল বাণিজ্য সহ আরো কত ধরণের বাণিজ্য যে চলছে তার হিসাব কে রাখে? চলছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, অপহরণ, গুম। গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় প্রীতি থেকে শুরু করে চলছে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, কোন কোন ক্ষেত্রে চলছে লুটপাট। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এসব দেখার ফুরসুৎ নেই। দেখেই বা লাভ কি, সরষের মাঝেই তো ভ‚ত। সবাই তো কমবেশি ভাগ পায়।
কেউ কেউ বাঙলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাবার চেষ্টা করছে বলে সরকারি অভিযোগ রয়েছে। দুই বিদেশী হত্যাকান্ডের সাথে কোন জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত নয়। দেশে কোন জঙ্গি সংগঠন বা আইএসআই নেই। এটা সরকারের সুস্পষ্ট দাবি। আবার পুলিশ আইএসআই সন্দেহে, জঙ্গি সন্দেহে নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে হয়রানি করছে, টর্চারিং করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। দেশে কোন খুন খারাপি হলে, অঘটন ঘটলে- রহস্য উদ্ঘাটন না করে বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের উপর দোষ চাপিয়ে দায়মুক্ত হয়ে যায়। যে কারণে দুস্কৃতিকারীরা নাশকতা বা অন্য কোন অঘটন ঘটিয়ে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে একজন এএসআই খুন হল। সেখানেও দোষ চাপানো হল বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের উপর। এটা কি ঠিক হল? গংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’Ñ বেদবাক্য মনে গেথে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলা হয়,তাহলে দেশের সচেতন মহল তাদের কি হিসাবে মুল্যায়ন করবে? টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে একটা কিছু বলে ফেললেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না। কোন্ অবস্থান থেকে কারা কি বলছেন আর কি করছেন তার মর্মার্থ আজকাল মূর্খরাও বুঝে। সুবিধা নেওয়ার জন্য এখন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক হয়ে গেছেন। অথচ এর আগে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামল পার করে এসেছেন। তখন বঙ্গবন্ধু প্রীতি কোথায় ছিল? সরকার কখনো বেকায়দায় পড়ে না। সরকারকে সংশ্লিষ্টরাই বেকায়দায় ফালায়।
৪৫ বছরেও দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। এর জন্য দায়ী কারা? কাদের হাত দিয়ে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা খরচ হয়? বুঝলাম সারকার বরাদ্দ দেয়। কিন্তু খরচ, খরচের খাত, খরচের ভাউচার, খরচের হাত কারা তৈরি করে? অনেকদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলাম। লেখাটির শিরোনাম ছিলÑ ‘চোরকে চোর বলা যাবেনা’। বললে গুম, খুন, অপহরণের শিকার হবেন। আপনার পরিবার হবে অভিভাবকহীন, আপনার সন্তানরা হবে এতিম।
আজকাল নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার জন্ম নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মূখ্য সচিব ভ‚য়া মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান সহ চার সচিবের ভ‚য়া সনদ ধরা পড়ার পর এমনটিও ধারণা করা যায় যে, এদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদও ভ‚য়া। ছাত্র জীবনে এরা হয়তো কোন ছাত্র রাজনীতিতে সন্ত্রাসী ও ক্যাডার ছিল। দলীয় তদবির আর ভয়ভীতি দেখিয়ে সনদ নিয়ে চাকুরি পেয়েছিল। এমনটি মনে করাই স্বাভাবিক। কারণ এসব আমলারা প্রজাতন্ত্রের সাথেও প্রতারণা করেছে। সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনা। এসব দুই নম্বর আমলারা আখের গোছাতে এখন ‘বঙ্গবন্ধুর জয়গান’ গাইছে। অথচ এরাই একদিন শহীদ জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়াকে স্যালুট করে এসেছে।
মূল কথায় ফিরে আসি। জনশক্তি রপ্তানির কথা বলছিলাম। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দেশের হাজার হাজার যুবক আদম পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে নৌকাযোগে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকের সলিল সমাধি হয়েছে। অনেকে আবার মালয়েশিয়ার মাটিতে পা রেখেও গভীর জঙ্গলে গিয়ে পাচারকারী চক্রের নিষ্ঠুর আচরণে নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়ে তারা গণকবরে সমাহিত হয়েছে। এভাবে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে, হাজার হাজার নারী বিধবা হয়েছে, অগনিত শিশু এতিম হয়েছে এবং হাজার হাজার পরিবার উদ্বাস্তু হয়েছে। অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার কার্যক্রমটি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছিল। এর সাথে কমবেশি সবাই জড়িত বলে কেউই নাক গলায়নি।
পরিশেষে কি আর লিখব, লিখতে গেলেই চারদিক থেকে লেখার বিষয় এসে ভীড় জমায়। ভ‚য়া মুক্তিযোদ্ধারা তো মুখে ‘জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি তুলে ভ‚য়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছে। আসল মুক্তিযোদ্ধারা এদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদও করছেন না। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তুত করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারের নাম আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম; এটা কি করে হল? আল-বদর রাজাকারদের নিয়েও আর মাতামাতি নেই।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব পরিবার মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে, অষুধ-পথ্য আর নিরাপত্তা দিয়ে আগলে রেখেছিল এবং হানাদার পাকবাহিনী যে কারণে আশ্রয়দাতাদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সর্বশান্ত করে দেয়। এছাড়াও সেসব পরিবারের কোন কোন সদস্যকে হানাদাররা গুলি করে হত্যা করে। এসব পরিবারের কি কোন স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার নাই? স্বাধীনতার এত বছর পর এধরণের দাবি উত্থাপন সত্যিই লজ্জাকর নয়কি? জাগো বাঙালি জাগো। মলিন আবরণ ছিন্ন করে জাগো।
লেখক: কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবং সভাপতি, কবি সংঘ বাংলাদেশ।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Share on Skype (Opens in new window)
- Click to share on Google+ (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to email this to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)