মিথ্যা সাক্ষ্য শিরকের সমান গুনাহ
মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন :
মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আমাদের সমাজে এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এই মহা অন্যায়ের পরিণাম-পরিণতি সম্পর্কে ভয়াবহ বর্ণনা এসেছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, ‘তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো এবং মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকো এমতাবস্থায় যে, মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশ করবে। তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না।’ (সূরা হজ : ৩০-৩১) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরকারকেরা লিখেছেন, উল্লিখিত আয়াতে মিথ্যা স্যাদানকে মূর্তিপূূূজা তথা শিরকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ, শিরক হলো এমন মিথ্যা অপবাদ, যা আল্লাহর প্রতি আরোপ করা হয়। অর্থাৎ যারা শিরক করে তারা এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর সাথে অন্যান্য দেব-দেবীও ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। তারাও ভাগ্য পরিবর্তন করার মালিক। অথচ আল্লাহ তায়ালা সব ধরনের শরিক থেকে মুক্ত এবং পবিত্র। আর মিথ্যা স্যা দেয়া এমন একটি অন্যায়, যার দ্বারা একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। নির্দোষ মানুষকে দোষী বানানো হয়। অথচ সেই ব্যক্তি এই অপবাদ থেকে পবিত্র। তাই মিথ্যা স্যা দেয়া ও শিরক করা উভয়টি কাছাকাছি অপরাধ। তাই পবিত্র কুরআনে মিথ্যা স্যা দেয়াকে মূর্তিপূজার সমতুল্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রাসূলে আকরাম সা:-এর বহু হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, মিথ্যা স্যা দেয়া ও শিরক সমপর্যায়ের অন্যায়। বিখ্যাত সাহাবি হজরত খুরায়ম ইবনে ফাতেক রা: বলেন, ‘একবার রাসূল সা: ফজরের নামাজ শেষ করার পর দাঁড়ালেন এবং তিনবার বললেন, মিথ্যা স্যা দানকে আল্লাহর সাথে শিরকের সমতুল্য করা হয়েছে।’ (আবু দাউদ শরিফ) আরেকটি হাদিসে মিথ্যা স্যা দেয়াকে সবচেয়ে বড় গুনাহগুলোর অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুুল্লাহ ইবনে ওনায়স রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলোÑ ০১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা; ০২. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া; ০৩. মিথ্যা কসম খাওয়া। প্রকৃতপে যখন কোনো শপথকারী বাধ্যতামূূলকভাবে শপথ করে এবং তাতে মাছির ডানা পরিমাণও মিথ্যা মিশ্রণ করে তখনই তার অন্তরের মধ্যে মাছির ডানা পরিমাণ একটি দাগ পড়ে যায়, যা কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।’ (তিরমিজি শরিফ) প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বলেন, আমি রাসূল সা:-কে এরূপ বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তির সুপারিশ আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী হয়, (অর্থাৎ মিথ্যা হয়) সে যেন আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কারো বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা করে, যতণ না সে তা থেকে ফিরে আসে, ততণ সে আল্লাহর ক্রোধের মধ্যে থাকে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুুুসলমানের ওপর এমন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, যা থেকে সেই মুুসলমান পবিত্র এবং মুক্ত; এমতাবস্থায় যতণ না সে তা থেকে (মিথ্যা মামলা করা থেকে) তওবা করবে, ততণ সে দোজখের কাদার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে।’ (আবু দাউদ) প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে অপর একটি হাদিস ইরশাদ হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মামলায় সাহায্য করে, সে বস্তুত আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরে যায়।’ (আবু দাউদ)
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Share on Skype (Opens in new window)
- Click to share on Google+ (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to email this to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)