ঝিনাইগাতীতে লেবু হত্যা মামলার বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ
মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর : শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে লেবু মিয়া হত্যা মামলার বাদী আনিছুর রহমান আহালুকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে আসামী পক্ষের স্বজনরা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী থানায় আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত লেবু মিয়ার বাবা আনিছুর রহমান আহালু।
দায়েরকৃত হত্যা মামলা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সুত্রে জানা যায়, উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের পূর্ব গজারীকুড়া গ্রামের আনিছুর রহমান আহালুর ছেলে লেবু মিয়া গত প্রায় ১ বছর আগে একই গ্রামের মনছুর আলীর ছেলে মোশারফের কাছ থেকে গ্রাম্য সুদে ১০হাজার টাকা নেয়। ঋণ নেওয়া পর লেবু ঢাকার গাজীপুরে একটি বাসের হেলপারের কাজে নিযুক্ত থাকার পাশাপাশি তার এক আত্মীয়র দায়ের করা মামলার কারণে দীর্ঘ সময় নিজ বাড়ীতে না আসায় গ্রহনকৃত ঋণের টাকাও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
লেবু গাজীপুর থেকে তার গ্রামের বাড়ীতে আসার সংবাদ পেয়ে গত ১৩মে ২০২১ ইং তারিখে দুপুর আনুমানিক ২ঘটিকার দিকে মোশারফের নেতৃত্বে একই গ্রামের আবু সামার ছেলে রেজাউল করিম, ঝিনাইগাতী সদরের মুছা কুলির ছেলে সেলিম মিয়া, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী গ্রামের রিয়াজুল মুন্সির ছেলে আতিক মিয়া সঙ্গবদ্ধ হয়ে লেবুর বাড়ীতে গিয়ে তাদের পাওনা সুদের টাকা ফেরতের জন্য বল প্রয়োগ করে। এমনকি এই মূহুর্তে টাকা ফেরত না দিলে লেবুকে তুলে আনার হুমকি দেয়।
সুদখোরদের পাওনা টাকার কথা লেবুর বাবা জানতে পেরে উক্ত টাকা পরিশোধের দ্বায়িত্ব নিয়ে তাদের ৪ জনকে লেবুর বাড়ী থেকে বিদায় করেন। কিন্তু লেবুর বাবার কথায় সুদখোরেরা আশ্বস্ত না হয়ে পূনরায় বিকেলে ওই ৪ব্যক্তি লেবুকে তুলে আনতে লেবুর বাড়ীতে গিয়ে হট্রগুল ও হাতাহাতি করে। তাদের আচরণে লেবু ভীত হয়ে ঘরে প্রবেশ করলে মোশারফও ঘরের ভিতরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর মোশারফ বেড়িয়ে আসে। এর পরেই লেবুকে বিষপান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
লেবুকে দ্রুত উদ্ধার করে আসামী রেজাউল সহ প্রথমে ঝিনাইগাতী হাসপাতালে পরে শেরপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে লেবু মৃত্যেুবরণ করলে রেজাউল সেখান থেকেই পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় লেবুর বাবা আনিছুর রহমান আহালু বাদী হয়ে ওই ৪জনকে আসামী করে ৩০৬/৩৪ ধারায় ঝিনাইগাতী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১ নং আসামী মোশারফকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
অপর দিকে গত ১১জুলাই/২১ইং তারিখে আসামী রেজাউল করিম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে বাদী থানায় এসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে নিজ বাড়ীতে যাওয়ার পথে আসামীর আপন চাচা দুদু মিয়া ও হারেজ আলী সহ অপরিচিত ৩/৪ লোক নিয়ে উপজেলার ব্রীজপাড় এলাকায় গতিরোধ করে মারধরের চেষ্টা সহ মামলা তুলে না নিলে বাদীকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।
এ ঘটনায় নিহত লেবুর বাবা বাদী হয়ে গত ১১জুলাই/২১ ইং তারিখে ৩/৪জন অজ্ঞাতনামা সহ খৈলকুড়া গ্রামের মৃত আ: ছামাদের ছেলে দুদু ও হারেজ আলীর নামে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে প্রত্যেক্ষদশী ধারাপানি গ্রামের নুর ইসলাম, ছাবর আলী, গজারীকুড়া গ্রামের মামুন জানান, রেজাউলকে গ্রেপ্তার করায় তারই চাচা দুদু ও হারেজ আলী কতৃর্ক একটি হত্যা মামলার বাদীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে শত শত মানুষের মধ্য ঝিনাইগাতীর ব্রীজপাড়ে আটকিয়ে মারধরের অবস্থা সৃস্টি করাসহ হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি প্রদান করা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান হাবিব বাদীকে রাস্তায় আটকানোর বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লেবু হত্যা মামলার ৪ আসামীর মধ্যে ২জনকে গ্রেফতার করেছি। অন্য দু’জনকেও গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে নিহত লেবুর বাবা আনিছুর রহমান আহালু জানান, সুদের ১০ হাজার টাকার বিষয়টি আমি জানতাম না। আমি বিষয়টি জেনে আসামী মোশারফ, রেজাউল, সেলিম ও আতিককে আমি নিজে তাদের সুদের পাওনা টাকা পরিশোধের দায়িত্ব নেওয়ার পরেও তারা আমার ছেলেটিকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে। এখন মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি সহ রাস্তা ঘাটে আটকাচ্ছে। আসামী ও তাদের স্বজনদের প্রতিনিয়ত হুমকির কারণে নিরাপত্তাহীণতায় ভোগছি। আমি আমার ছেলে লেবু হত্যার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।