৭ বছর ৭ মাস স্বজনরা জানতেন না আমি জীবিত না মৃত, ৮ মাস সূর্য্যের আলো দেখিনি ! —-মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ
জীবনের ফেলে আসা অনেক স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভিড় জমিয়েছে। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-যন্ত্রণায় ভরপুর আমার স্মৃতিময় দিনগুলো। আমার যৌবনের সোনালী দিনগুলো কেটেছে আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধ আর কারাগারের অভ্যন্তরে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে পুনরায় সক্রিয় ভাবে ছাত্র লীগের রাজনীতি শুরু করি। ১৯৭২ সালে নকলা থানা ছাত্র লীগের সভাপতি জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. রফিকুল আলম আর আমি শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে মোস্তা ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে, এ বিভাগের ভি.পি নির্বাচিত হন এবং রফিক ভাই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়ে সেখানে ছাত্র লীগের নেতৃত্ব দেন। এমতাবস্থায় ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে নকলা থানা ছাত্র লীগের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। তৎকালে নকলা থানা ছিলো জামালপুর মহুকুমার অধীনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি তখন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ইন্টারমেডিয়েটের ফাইনাল পরীক্ষার্থী। ১৯৭১ সালের মতো আবার বই, খাতা, কলম টেবিলের উপর রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম। গারো পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলাম। খুনি জিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে ১৯৭৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছিলাম।অনেক মানুষের জীবনে অনেক ধরনের স্মৃতি থাকে। তেমনি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় একটি দিন হলো ১৮ সেপ্টেম্বর; যে দিনটি আমার জীবনের গতি পথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। আজ থেকে ৪৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের এই দিনে শেরপুর সদর উপজেলার চান্দের নগর গ্রামে প্রায় দুইশ খানেক আর্মি, পুলিশ ঘেরাও দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এর পর দেখতে দেখতে ৪৪ বছর চলে গেলো।
তার পরে জেলে বসে তিনি যে ডাইরি লিখেছিলাম এর মধ্য থেকে সংক্ষেপে দু’টি কথা লিখে স্মৃতি চারণ করবো। ডায়েরির সব কথা লিখতে গেলে বড় একটি বই হয়ে যাবে। তাই সংক্ষেপে বলছি- দিনটি ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সাল। ষড় ঋতুর এই দেশে তখন শরৎ কাল। শরতের স্নিগ্ধ সকাল। সূর্য তখনও উঠেনি। শেরপুর সদর থানার চান্দের নগর গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের কুঁড়ে ঘরে আমি একা তখনও ঘুমে আছি। সারা রাতের পথ চলায় কান্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল দেহ-মন। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। চৌকিতে বিছানো ছেড়া একটি কাঁথা। আমার বাম পাশে কাঁথার নিচে একটি জি-৩ রাইফেল, একটি নাইন এম এম পিস্তল, দুইটি হ্যান্ড গ্রেনেড, কিছু গুলি, কিছু বাংলার ডাক পত্রিকা ও কয়েকটি কয়টি ম্যাগজিন।’ এমতাবস্থায় আমাকে গ্রেপ্তারের পরেও আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হওয়ায় তারা আমাকে আবার ধরে এনে প্রথমেই রাইফেলের বাট দিয়ে তলপেটে সজোরে একটা আঘাত করে। সেই আঘাত আমার গোপনাঙ্গের উপরে ডান পাশে লাগে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। ওরা অশ্রাব্য-অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিলো। একটা লাঠি দিয়ে পিঠে ও পায়ে তাদের ইচ্ছা মতো পিটালো। কিছু কক্ষনের মধ্যে গোপনাঙ্গ ফুলে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলো। চোখ, হাত বেধে সম্ভাবত দুই জন সিপাহী দুই পাশে ধরে হাটিয়ে নিয়ে নকলা-শেরপুরের মূল রাস্তায় রাখা গাড়িতে উঠিয়ে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে গেলো। শেরপুর থানার তৎকালীন সি.ও অফিসে আর্মিদের ক্যাম্প ছিলো। সেখানে একটা বিল্ডিংয়ের দো’তলার একটা রুমে নিয়ে সম্ভাবত একটি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিয়ে অন্য আরেকটি রুমে নিয়ে হাত ও চোখ খুলে দিয়ে কক্ষের বাহির দিয়ে তালা লাগিয়ে দিল। ধীরে ধীরে ব্যথাটা কমে আসলো। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে একজন ক্যাপ্টেন এলো। পাশের রুমে নিয়ে মেঝেতে বসালো। আমি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কাতরাতে কাতরাতে বসে রইলাম। আমাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। তাদের মনের মতো উত্তর না পেয়ে আমার বুকে একটা লাথি মারলো। আমি ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেলাম। আমার দম বন্ধ হবার অবস্থা। তারা আবার উঠিয়ে বসালো। এবার তাদে হাতে থাকা বেতের লাঠি দিয়ে ৪-৫ টা সজোরে পিটুনি দিয়ে আবার আগের রুমে নিয়ে তালা লাগিয়ে দিল।
ওই দিন বিকেলের দিকে আবার হাবিব নামে এক মেজর এলে আমাকে তার সামনে হাজির করা হলো। প্রথমেই আমার নাম জিজ্ঞেস করলে আমার নাম বললাম ’শফিকুল ইসলাম মিলন।’ এর মধ্যে জামালপুর থেকে এস.ডি.পি.ও রশিদ সাহেব এসে মেজর হাবিব কে স্যালুট জানিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ’জিন্নাহ মিয়া, আপনি?’ মেজর হাবিব একটা চেয়ারে বসা ছিলো ’জিন্নাহ’ নামটা শুনে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়েই বললো ’তুই-ই জিন্নাহ? তোর নামই তাহলে জিন্নাহ?’ আমি শটান দাঁড়িয়ে থাকলাম। মেজর হাবিব উচ্চতায় প্রায় ৬ ফুট। সে আমাকে ঠাস করে একটা চড় মেরে বললো ’মিথ্যা কথা বললি কেন? সেন্টি ওকে নিয়ে যাও।’ তখন রশিদ সাহেব একটা কথা বলেছিলেন ‘স্যার ওর ফ্যামিলিকে আমি চিনি, তারা খুব ভালো লোক।’ পরে রশিদ সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের ছলে বললেন ‘কেন এই পথে এসে জীবনটা নষ্ট করলেন? মেজর হাবিবের কথায় বুঝলাম আমার নামে তাদের কাছে অনেক অভিযোগ জমা হয়ে আছে। সেন্টি আমাকে আবার পূর্বের কক্ষে নিয়ে গেলো। তখন পবিত্র রমজানের দিন ছিলো, কিন্তু আমার ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও এ দিন রোজা রাখা হয়নি। ক্ষুধা পেটটা চু-চু করছিলো, আর পানি পিপাসায় বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছিলো। এর কিছু ক্ষন পরেই আমার সামনে ইফতার এলো। আমি যেহেতু রোজা রাখিনি, তাছাড়া দেশের স্বার্থে আমাকে বেঁেচ থাকতে হবে; তাই আযানের আগেই ইফতার গুলো খেয়ে ফেললাম। যা হউক এভাবে লিখলে শেষ হবে না; তাই সংক্ষিপ্ত করতে চাই। ১৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ৮ বছর কারাগারে ছিলাম। ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বরে শেরপুর আর্মি ক্যাম্পে রেখে নির্যাতন করে, ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় জামালপুর আর্মি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। জামালপুর ভোকেশনাল ট্রেনিংইনস্টিটিউটশন আর্মিদের ক্যাম্প ছিলো। এই খানে একজন কর্নেলের রুমে আমাকে পাঠায়। কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের মতো উত্তর না পেয়ে আমাকে দুজন সিপাই আমার পায়ে রশি দিয়ে বেধে ফেলে। এরপর কপি কলের সাহায্যে টেনে টেনে আমাকে উপরের দিকে তুলে। আমার পা উপরের দিকে আর মুখ নীচের দিকে। ঝুলন্ত অবস্থায় বেত দিয়ে পিটাচ্ছিলো। কিছু ক্ষনের মধ্যে আমার নাকে মুখে রক্ত এসে গেলো। তার পরে নীচে নামানো হলো। আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু, এরপর আবার হাতের বেত দিয়ে ইচ্ছা মতো পিটালো। ২১ সেপ্টেম্বর সকালে জামালপুর থেকে টাঙ্গাইল আর্মি ক্যাম্পে পাঠায়। এই টাঙ্গাইল আর্মি ক্যাম্পে আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন হয়েছিলো। যা এই পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না। শুধু এটুকু বলি কারেন্টের মোটা তার গুলো দিয়ে পিটিয়ে সারা শরীর রক্তাক্ত করেছিলো। শরীর থেকে ঝির ঝির করে রক্ত ঝরছিল! আর ঐ ক্ষতস্থানে ঔষধের কথা বলে লবন-পানি লাগিয়ে দিয়েছিলো। আমার চিৎকারে মনে হচ্ছিল বিল্ডিং এর দেয়াল ফেটে যাচ্ছে। আর আমার আত্মাটা বের হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি আর বাঁচতে পারছিনা। এ টাঙ্গাইল ক্যাম্পে কারেন্টের শক্ দেওয়া হয়েছিলো। কপিকলে ঝুলিয়ে বেত আর মোটা ক্যাবল দিয়ে পিটিয়েছে তারা। আমার শরীর ফুলে গিয়ে জ্বর এসে যায়। আমার ডান পা একটা ইটের উপর রেখে আরেকটা ইট দিয়ে যখন আঘাত করতে যাচ্ছে, তখন পা বাচাতে টান দিতেই বৃদ্ধাঙ্গুলিতে লেগে নখটা থেতলে যায়। যার ক্ষত এখনো বহন করে চলেছি। ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে রেখে যে নির্যাতন করেছে তা আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভুলার নয়। কোন মানুষের ওপর কোন মানুষ জাত এভাবে নির্যাতন করতে পারে আমি ও আমার মতো নির্যাতন ভোগী ছাড়া হয়তো কেউ বুঝবে না। ২১ ও২২ তারিখ টাঙ্গাইল ক্যাম্পে রেখে নির্যাতন করে ২৩ সেপ্টেম্বর চোখ বেধে দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে পাঠিয়ে দেয়। ঢাকা সেনানিবাসের তখনকার ডি.এফ.আই-এ রাখা হয়। যেখানে রাখা হলো সেই স্থানটা এমন ছিল যে, সূর্য্যরে আলো প্রবেশের কোন সুযোগ ছিলো না। ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৭৭ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত, এই দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ৬ মাস২৩ দিন পৃথিবীতে সূর্য উঠে, সূর্য আলো দেয়, সূর্য অস্ত যায় তা দেখিনি। প্রায় ৩ মাস উপুর করে ঘুমিয়েছি। ৪৫ দিন আমার মাথার উপর ২০ ঘন্টা করে এক হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বালানো থাকতো। আমার মা-বাবা পরিবার-পরিজন জানতো না আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি। ১৯৭৭ সালের ১৫ এপ্রিল আমাকে পুলিশের এস.বি-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। শাহাবাগ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এক রাত রেখে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৬ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে মনে হলো নতুন জীবন ফিরে পেলাম। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরের ২ তারিখ জাপান এয়ারলাইনসের একটি বিমান ছিনতাই এর ঘটনায় খুনী জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ সামরিক ক্যু হয়। সেই সময় জিয়া শত শত আর্মি, বিমান বাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। ওই সময় ঢাকা জেলখানা খালি করতে বিভিন্ন বন্দীদের বিভিন্ন জেলে পাঠায়। ৭ অক্টোবর আমাকে সহ প্রায় ৪০ জন বন্দীদের বরিশাল জেলে স্থানান্তর কার হয়। সেখানে বন্দীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করার কারণে ১৯৭৮ এর ৬ জুলাই তারিখে বরিশাল জেল থেকে যশোর জেলে পাঠানো হয়। আমার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ ১০ নম্বর সামরিক আদালতে সরকার বিরোধী মামলা ছিল। সেই কারণে ১৯৭৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেল থেকে ময়মনসিংহ জেলে নিয়ে।
১৯৭৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহ ১০ নম্বর সামরিক আদালতে এম.এল.আর-১০ ও এম.এল.আর-১৭ এসব ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। এই সাজা মাথায় নিয়ে ময়মনসিংহ জেলে সময়টা ভালই কাটছিল। ১৯৮০ সালের মার্চ মাসে আমরা জেলের বন্দীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করলাম। এক পর্যায়ে আমরন অনশন শুরু করি। আট দিনের দিন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। এরপর সেই সময়ের দশ দলীয় ঐক্য জোটের জেলার নেতাদের আহবানে আমরা সন্ধ্যায় অনশন প্রত্যাহার করি।
১৯৮০ সালের নভেম্বরের ১৫ তারিখে শেরপুর থেকে আতিকুর রহমান আতিক সাহেব, বাবু চন্দন কুমার পালু ও শ্রীবরদীর মতিনকে আনা হলো ময়মনসিংহ জেলে। তাদের রাখা হলো নিউ সেলে। সেখানে তাদের যাতে খাবারের কষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা আমি জেল কর্তৃপক্ষকে বলে সুব্যবস্থা করিয়ে ছিলাম। এরপর নভেম্বরের ২৭ তারিখে হঠাৎ করে সকাল বেলা ৫০-৬০ জন জেল পুলিশ নিয়ে জেলার, ডেপুটি জেলার আমার রুমের সামনে হাজির। বলতে গেলে এক রকম জোর করেই আমাকে ঢাকা জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ঢাকা জেলে প্রথমে ১৪ সেলে, পরে নিউ জেলে যেখানে জাতীয় চার নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে রাখা হলো।
১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমার মেরুদন্ডের হাড়ে টিবি (যক্ষা) ধরা পড়লো। দীর্ঘ চিকিৎসার পর রোগটা ভালো হলো। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক আইন জারি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাকে ৮২ সালের ৩০ আগষ্ট সন্ধ্যায় ঢাকা জেল থেকে বদলির আদেশ আসে। এবার আমার গন্তব্য হয় সিলেট জেলে। ৩০ আগষ্ট রাতের ট্রেনে পুলিশ পাহাড়ায় সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা করি। ৩১ আগস্ট সকালে সিলেট জেলে পৌঁছি। এখানের সময়টা খুব কষ্টে কেটেছে। ১৯৮৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হঠ্যাৎ ময়মনসিংহ জেলে পাঠানোর আদেশ এলো; অবশ্যই এর জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতের ট্রেনে সিলেট থেকে পুলিশ পাহারায় ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা করি। ময়মনসিংহ জেলে পৌঁছি ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে। ওই জেলে আমাকে পুরাতন সেলে রাখলেও জেলখানা আমার খুব পরিচিত হওয়ায় দিনগুলো কেটে যায়। ১৯৮৪ সালে আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের এরশাদ সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো। আমি দীর্ঘ প্রায় আট বছর সময় ক্যান্টনমেন্ট এবং কারাগারে অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করে ১৯৮৪ সালের ১৬ এপ্রিল বিকাল ৪ টায় ময়মনসিংহ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করি। এই বিভীষিকাময় দিন গুলো আজও আমাকে তাড়া করে ফিরে। তবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেশ তড় তড় করে এগিয়ে চলছে দেখে মনে শান্তি খোঁজে পাই। আওয়ামী লীগ সরাকরের নেতৃত্বে দেশ এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে চলুক এমনটাই কামনা করি।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Share on Skype (Opens in new window)
- Click to share on Google+ (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to email this to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)