গণফোরামের দুই এমপির শপথের ইঙ্গিত কামালের

রাজনীতি ডেস্ক:
বিএনপি শপথ নেবে না জানালেও তাদের জোটের শরিক গণফোরামের দুই জন সংসদ সদস্য শপথ নেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সভাপতি কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তাদের (নির্বাচিত সদস্যদের) শপথ নেয়া উচিত। তবে আমরা মিটিংএ আলোচনার মাধ্যমে তা সিদ্ধান্ত নেব। বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিতে দেখছি এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্তই নেব।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভার পর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল দশটা থেকে দলের বর্ধিত সভায় নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে জিতেছেন গণফোরামেন সুলতান মো. মনসুর আহমেদ। আর সিলেট-২ আসনে বিএনপির সমর্থনে জিতেছেন গণফোরামের মোকাব্বির খান।
এই ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে এরই মধ্যে ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি এবং তার জোটের শরিকরা। গত বৃহস্পতিবার ২৮৯ জন সংসদ সদস্য শপথ নিলেও নেননি বিএনপির পাঁচ জন এবং গণফোরামের দুই জন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, এই ভোট তারা মানেন না। ফলে তারা শপথ নেবেন না।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে গণফোরাম গঠন করা কামাল হোসেনের দল এবারই প্রথম সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দলটির সভাপতি বলছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের দুই প্রার্থী নির্বাচিত হওয়া বড় রকমের অর্জন। তাদের শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিরোধী দল থেকে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। এটা তাদের অর্জন। তাদের অভিনন্দন জানাই। তারা এই অর্জন ধরে রেখে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবে।’
বিএনপি বলছে তারা শপথে নেবে না, এই অবস্থায় গণফোরাম যদি শপথ নেয়, তাহলে ঐক্যের সমস্যা হবে কি না- জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে। কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হবে না। ঐক্যফ্রন্ট আমরা রাখার জন্যই করেছি। আমরা ঐক্যের মধ্যদিয়ে যেতে চাই। ঐক্য থাকবে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন হবে।’
‘সরকার একের পর এক সংবিধান ভঙ্গ করছে। এই সংবিধান ভঙ্গের কারণে গুরুতর সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করছে।এতে সবাই উদ্বিগ্ন। দুঃখ লাগে যে বছরের শুরুতে এমন একটি নির্বাচন হয়েছে, যা অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার কথা, যেখানে জনগণের মালিকানার কথা থাকার কথা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক, তা হয়নি।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার কথা বলেও কেন ভোটে গেছেন- এমন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত দেখা এবং প্রমাণ করার জন্য গিয়েছি যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।’
‘অনেকে আমাকে বলেছেন, সকাল থেকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কাজ তো রাতেই হয়ে গেছে (ব্যালটে সিল মারা হয়ে গেছে)।’
নবনির্বাচিত সরকারকে বিভিন্ন দেশ সমর্থন দিচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, “অনেকেই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে, কিন্তু দেখবেন তাদের বক্তব্যে ‘কিন্তু’ ‘কিন্তু’ রয়েছে।’
‘তারা কেউ জনপ্রতিনিধি’
এর আগে কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। বলেন, ‘ক্ষমতাসীন সরকার, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও আদালত কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। নির্বাচন কমিশন গত ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছে তারা কেউই নির্বাচিত নয়। এবং যাদের গেজেট প্রকাশ করেছে তারা কেউই জনপ্রতিনিধি নয়।’
‘আমরা ইতোপূর্বে এই নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছি। অবিলম্বে নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাই। তা না হলে ঐক্যবদ্ধ জনগণকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণআন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের হারানো গণতন্ত্র পুনরোদ্ধার করব। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অচিরেই বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন, কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।’
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।