বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে নকলা প্রেসক্লাবে সচেতনতামূলক সভা
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি: ‘দিবস উদযাপনের ২০ বছর : ধন্যবাদ হে রক্তদাতা’ এ প্রতিপাদ্যকে ধারন করে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী নকলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ও আয়োজনে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাবের অফিস কক্ষে প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার উপদেষ্টা মোঃ মোশারফ হোসাইন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচেতনতা মূলক সভায় বক্তব্য রাখেন- প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, প্রেস ক্লাবের ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নূর হোসেন, প্রেস ক্লাবের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ও ব্লাড ব্যাংক অফ নকলার সদস্য মাজহারুল ইসলাম লালন, কলিকাল’র সম্পাদক প্রকাশক ও ব্লাড ব্যাংক অফ নকলার সদস্য তারেক আহসান, প্রেস ক্লাবের সদস্য ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার সদস্য রেজাউল হাসান সাফিত, রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার সদস্য মাহবুবর রহমান, তরুণ সাংবাদিক ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার সদস্য হাসান মিয়া ও লিমন আহম্মেদ প্রমুখ।
এসময় প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক, রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার সাবেক সভাপতি ও ব্লাড ব্যাংক অফ নকলার সদস্য ফজলে রাব্বী রাজন, প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ নকলা শাখার সদস্য মোঃ সেলিম রেজাসহ প্রেস ক্লাবের, ব্লাড ব্যাংক অফ নকলার ও রক্ত সৈনিক বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ দিবস ও ব্লাড ব্যাংক অফ নকলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রেস ক্লাবের সদস্য ও ব্লাড ব্যাংক অফ নকলার প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রচার সম্পাদক রাইসুল ইসলাম রিফাত স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেছেন এবং এই দানটি ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’কে উৎসর্গ করেন।
বক্তারা জানান, ১৪ জুন ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালিত হয়। ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। মূলত নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণ ও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষেই বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
রক্তদানকে উৎসাহিত করা এবং রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা সংস্থার উদ্যোগে প্রতি বছর রক্তদাতা দিবস উদযাপিত হয়। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়।
নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণ ও রক্তদাতাদের স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহ দিতেই গত ২০ বছর ধরে ১৪ জুন তারিখটি ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। নোবেলবিজয়ী জীববিজ্ঞানী ও চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০০ সালে প্রথম রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার করেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রে অনন্য একটি আবিষ্কার। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের জন্মদিন ১৪ জুনকে এ দিবস পালনের জন্যে বেছে নেওয়া হয় বলে বক্তারা জানান।
তারা বলেন, সাধারণত থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতি মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় যেকোন অপারেশন, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের প্রয়োজনে রক্তই দিতে হয়; রক্তের কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক মানসিকভাবে আপাত সুস্থ ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো সক্ষম ব্যক্তি প্রতি ৪ মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন। নিয়মিত রক্তদানে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণেরও বেশি কমে যায়। এমনকি আত্মিক-আধ্যাত্মিকভাবেও রক্তদানের উপকার লাভ করেন দাতাগন।
বক্তারা আরো জানান, আমাদের দেশে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের উপর নির্ভরতা দিন দিন কমছে, স্বজনদের দানের পরিমাণ বেড়েছে। তবে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা আমরা এখনও মেটাতে পারছি না; অথচ রক্তদানের জন্যে ঐকান্তিক ইচ্ছাই যথেষ্ট।
ধর্মীয়ভাবেও রক্তদান অত্যন্ত পূণ্যের কাজ। প্রাপ্ত বয়স্ক সকলকে এই পূণ্যের কাজে অংশীদার করতে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে রক্তচাহিদা পূরণে সঙ্ঘবদ্ধ সচেতনতাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন। একটি জনগোষ্ঠীর অল্প কিছু অংশ সামর্থ্যবান মানুষ যদি নিয়মিত রক্তদান করেন তাহলেই আমাদের দেশে রক্তের অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু হওয়ার কথা না। নিয়মিত ছোট্ট এই দান নতুন করে হাসি ফোটাতে পারে লাখো মানুষের জীবনে।
এক তথ্যের বরাতে বক্তারা জানান, আমাদের দেশে বছরে রক্তের চাহিদা আনুমানিক ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ ইউনিট। অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের এই চাহিদা একেবারেই নগণ্য। তবুও আমরা স্বেচ্ছায় রক্তদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। রক্তের প্রয়োজন মেটাতে যেহেতু কেবল রক্তই দিতে হয়; সেহেতু ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা বৃদ্ধি করাই হলো রক্তের চাহিদা মেটানোর অন্যতম মাধ্যম বলে বক্তারা মনে করেন।
তারা আরো জানান, রক্তদানে অনেক উপকার পাওয়া যায়। রক্ত দিলে শারীরিকভাবে মেরুমজ্জার রিজুভিনেশান বা স্টিমুলেশান, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে দিগুনেরও বেশি, ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমাতে ও বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া থমকে যাওয়া ইত্যাদি লাভ করতে রক্তদান গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। সামাজিকভাবে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে, রক্ত নিয়ে ব্যবসা কমাতে, সমাজে ঘাতক রোগের বিস্তার কমানোসহ সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধন বৃদ্ধি করতে রক্তদানের ভূমিকা অপরিসীম। বিনা খরচে ‘ভালো আছি’ তৃপ্তিবোধ আনয়ন করতে ও অপার আনন্দের অনুভূতি উপভোগ করা যায় রক্তদানের মাধ্যমে। তারা বলেন, দআমরা বলতে পারি ইহকালে যত ধরনের দান আছে তার মধ্যে রক্তদান হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ দান’। তাই বক্তারা প্রাপ্ত বয়স্ক সকলকে বছরে অন্তত ২ থেকে ৩ বার স্বেচ্ছায় রক্ত দানে এগিয়ে আসার আহবান জানান।