কোন আয় হালাল এবং কোন আয় হারাম ?
মাওলানা মিরাজ রহমান : মানবজীবনে জীবিকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জীবিকা ছাড়া মানুষ জীবন ধারণ করতে পারে না। জীবিকার ব্যবস্থা না থাকলে নিজ জীবনে ও পরিবারে সৃষ্টি হয় অশান্তি। তাই নিজ নিজ যোগ্যতায় জীবিকার জন্য পরিশ্রম ও চেষ্টা-তদবির করা প্রত্যেক মানুষের প্রতিদিনের একটি মৌলিক কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা সব জীবের রিজিকদাতা, পালনকর্তা। মানুষের রিজিক তার হাতেই রয়েছে। তবে এই রিজিক অনুসন্ধানের জন্য তিনি মানুষকে স্পষ্ট কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ রিজিক সন্ধান করবে।’ (সুরা জুম’আ-১০) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জীবন উপকরণ কামনা কর আল্লাহর নিকট এবং তারই ইবাদত কর আর তারই প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সুরা আনকাবুত-১৭) হজরত উমর ফারুক (রা.) বলেন, তোমরা কেউ জীবিকা অন্বেষণ ছেড়ে দিয়ে অলসভাবে বসে থেকো না, কেননা জীবিকা সন্ধান করার দায়িত্ব তোমাদেরই। নিশ্চয় যারা অলসভাবে বসে থাকে আর বলে জীবিকা তো মহান আল্লাহ তায়ালার হাতে, তারা বোঝে না প্রভুর হিকমত। তারা হলো অজ্ঞ, আল্লাহ মহান, সর্বজ্ঞ। জীবন চলার পথে মানুষের অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে আরাম-আয়েশে জীবনটা কাটিয়ে দিতে মন চায়। আমরা অবশ্যই পারি দুনিয়ার জীবনে আরাম-আয়েশ ও সুখে-শান্তিতে কাটাতে। ইসলাম তাতে কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করেনি। তবে শর্ত হলো ভোগবিলাসিতার জন্য সম্পদের উপার্জন করতে হবে হালাল উপায়ে। কোনোভাবেই অসৎ বা হারাম মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যাবে না। ইসলামে উপার্জনের গুরুত্ব অনেক। তবে তা হালাল উপায়ে হওয়া আবশ্যক। এ সম্পর্কে কোরানে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মানব জাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু তা হতে তোমরা আহার কর এবং শয়তানের পথ থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্র।’ (সুরা বাকারা-১৬৮)। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল রুজি সন্ধান করা ফরজের পর একটি ফরজ।’ (তিরমিজি) হারাম কিছু আহার করার ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি অন্য একটি হাদিসে বলেন, যে দেহ হারাম খাদ্য বস্তু দ্বারা লালিত-পালিত তা কখনো জান্নাতে যাবে না। জাহান্নামই হবে তার একমাত্র ঠিকানা। (বুখারি)। মানবজীবনে সহায়-সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থনৈতিক বিষয়াদি মানুষের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগপূর্ণও বটে। কেননা মানবজীবনের তাবৎ কর্মকাণ্ডের চাকা অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। ইসলাম যেহেতু একটি পূণার্ঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, সেহেতু ইসলাম মানুষের জন্য শুধু এক উন্নত ও আদর্শ সমাজ ব্যবস্থাই উপস্থাপন করেনি, মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে সুষ্ঠুরূপে গঠন ও পরিচালিত করার জন্য এক নির্ভুল ও উজ্জ্বল অর্থ ব্যবস্থার রূপরেখাও পেশ করেছে, যে ব্যবস্থায় নেই অন্যকে বঞ্চিত করার কোনো পথ। জায়গা নেই কোনো ধরনের শঠতা ও চাতুর্যতার। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে বা অবৈধ পন্থায় ভক্ষণ করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারো।’-সুরা নিসা : ২৯ মানুষ হিসেবে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রত্যেকেই কম-বেশি আয়-রোজগারের পেছনে ছোটেন। এটাই মনুষ্য প্রবৃত্তি। কিন্তু সেই আয়-রোজগার হতে হবে বৈধ পন্থায়। অন্যের সম্পদ বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে নয়। ইসলাম মানুষকে হালাল পথে উপার্জনের কথা বলে। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘হালাল রুজির সন্ধানকে প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ফরজ সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।’ মূলত ইসলাম মানুষকে উপার্জনক্ষম হওয়ার আহ্বান জানায়। ইসলামে নিজ হাতের উপার্জনকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল রুজি সংগ্রহ করা ফরজের পর ফরজ।’ মুসলমানগণ তাদের আয়-রোজগার করবে ইসলাম নির্দেশিত পথে-এটাই ইমানের দাবি। যেমন হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) যুগে সব ধরনের বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজে উপার্জন করেছেন। সাহাবাগণ উপার্জন করেছেন। এমনকি নারী সাহাবাগণও সাধ্যমতো উপার্জন করেছেন। তাদের উৎপাদন, বিনিয়োগ, আয়, ব্যয় ও ভোগ ইত্যাদি সবক্ষেত্রে ইসলামের মৌল চেতনার প্রভাব কার্যকরভাবে বিদ্যমান ছিল। সে সময় উৎপাদনের প্রতি এতটা গুরুত্বারোপ করা হয় যে, জমি পতিত অবস্থায় রাখতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। জমি পতিত অবস্থায় ফেলে রাখার দায়ে হজরত উমর (রা.) সাহাবি হজরত বিলাল বিন হারেছ (রা.) হতে বন্দোবস্তকৃত জমি ফেরত নিয়েছিলেন। ইসলাম অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদ-ঘুষকে হারাম ঘোষণা করেছে। হারাম করেছে সম্পদ পুঁজিকরণ ও মজুদদারিতাকেও। এ ছাড়া অপব্যয় করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। আর এসবেরই মূল কারণ হলো, শোষণ রোধ করে সামাজিক ভারসাম্যতা রক্ষা করা।
ভাল লাগলে শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Share on Skype (Opens in new window)
- Click to share on Google+ (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to email this to a friend (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)