‘আমি প্রথম শ্রেণির অফিসার হতে চাই’ বললেন সেই প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী সুরাইয়া
মইনুল হোসেন প্লাবন, শেরপুর : শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সুতির পাড় গ্রামের মাওলানা মো: ছফির উদ্দিন ও মুর্শিদা ছফিরের প্রতিবন্ধী কন্যা ছুরাইয়া (১৮)। প্রতিবন্ধী ছুরাইয়া ছোট থেকেই লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় হাত দিয়ে কোন কাজ করা বা লেখার শক্তি নেই তার হাতে। তাই সে তার ২ পা দিয়েই লেখার চেষ্টা করতে থাকে। বাক প্রতিবন্ধী থাকলেও শিক্ষকদের কথা শুনেই সে পড়া শিখতো। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গেলে কথা হয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সুরাইয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন- ভবিষ্যতে প্রথম শ্রেণীর একজন অফিসার হবো। স্বপ পুরনের জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ”খ” ইউনিটে অংশ নিয়েছি। দু পায়ে লিখে পরীক্ষা দেয়ায় সবার নজরেও এসছে আমার উপর।
জানা গেছে, প্রথমে সে তার গ্রামের বাড়ী আন্ধারিয়া সুতির পাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়া শুরু করে। কারোর সাহায্য ছাড়াই দুই পায়ে লিখেই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এর পর সে আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সলে জেএসসিতে জিপিএ-৪ ও ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। আর ২০২০ সালে শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এলাকাবাসী প্রথমে তাকে অবহেলা করলেও ছুরাইয়ার এ অধম্য চেষ্টায় এখন তাকে উদাহরণ মনে করে সবাই। এলাকাবাসীর দাবী সরকার যেন এ মেয়েটির দিকে দৃষ্টি দেন।
প্রতিবেশী সফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিবন্ধী মেয়েডারে দেইখা আমরা মনে করতাম এডারে দিয়ে কি করবো। এহন দেহি ও অনেকখানি নেহা পড়া কইরা ফেলাইছে। আমরা সরকারের কাছে দাবী করছি তারে সহযোগিতা করার জন্য। আরকে প্রতিবেশী মরিয়ম আক্তার বলেন, আমরা প্রথমে সুরাইয়াকে অবহেলা করতাম। মনে করতাম মেয়েটিকে নিয়ে বাবা মার অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু সুরাইয়ার অধম্য ইচ্ছা শক্তিতে এখন আশির্বাদ হবে বলে আমরা মনে করি। প্রতিবন্ধী ছুরাইয়ার স্বপ্ন পূরণে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে আসবেন। এতে উদাহরণ হয়ে থাকবে ছুরাইয়া। প্রতিবন্ধী ছুরাইয়ারাও পারে সব কিছু করতে।
সুরাইয়ার বাবা শেরপুর চরপক্ষীমারী বীরমুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল স্কুলের সহাকারী প্রধান শিক্ষক ছফির উদ্দিন জানান, আগে আমরা মনে করতাম সে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু সে যখন জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর আমাদের বিশ্বাস হয়েছে সে একটা কিছু করতে পারবে। আমার মেয়েটির আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য তার মায়ের ভূমিকাও অনেক। মা মুর্শিদা ছফির জানান, আমি আমার মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ করতে সরকার এগিয়ে আসবেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবন্ধী কোঠায় হলেও যেন স্থান পান।
কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল বারি চান বলেন, আমরা কেউ আগে সুরাইয়ার কথা জানতাম না। শিক্ষক ছফির উদ্দিন আমাদের কখনোই তা বলেননি। হঠাৎ ফেসবুক যখন সে ভাইরাল, তখন তার কথা জানতে পারি। সুরাইয়ার মতো একজন মেধাবী মানুষ আমার এলাকায় আছে, এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমি আশা করি সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সুরাইয়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চান মিয়া বলেন, সুরাইয়া আমাদের জন্য মডেল। তাকে অনুসরণ করে অনেক প্রতিবন্ধী শিশু ভালো কিছু করার আগ্রহ করবে। তার খবর এখন পুরো দেশ জানে। এটা শেরপুরবাসীর জন্য অনেক গর্বের। তিনি আরও বলেন, আমি যতদূর জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা আছে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী সুরাইয়াকে যেন সেখানে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
শেপুরের জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশীদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ২ পায়ে লিখে প্রতিবন্ধী সুরাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা আশা করছি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবে। কারণ সে কারো সাহায্য ছাড়াই দু’পায়ে লিখেই এ পর্যন্ত এসচে। আমরা ওই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সবধরনের সহযোগিতা করবো।